শনিবার ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমিতির গডফাদার কারা?

চট্রগ্রাম সমিতির অনিশ্চিত যাত্রাঃ সভার ভিডিও প্রকাশের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   127 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

চট্রগ্রাম সমিতির অনিশ্চিত যাত্রাঃ সভার ভিডিও প্রকাশের দাবি

প্রবাসের অন্যতম বৃহত্তম সংগঠন চট্রগ্রাম সমিতিতে অশনির আলামত দেখা যাচ্ছে। ২০২১ সালের পর থেকে কোন নির্বাচিত কমিটি না থাকা ও অর্ন্তবর্তীকালীন  কমিটির সদস্যদের কলহ সংগঠনটিকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ৯ মাসের জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন  কমিটি গঠিত হলেও ১৮ মাসেও তারা নির্বাচনের আয়োজন করতে পারছেন না। তারা বিভিন্ন সময়ে বৈঠকে বসে নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হন। এমনি এক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল গত ২৭ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সভায়।

বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এলাকায় সংগঠনটির একটি নিজস্ব ভবন রয়েছে। এই সংগঠনটি কিছুদিন পর পর অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে। ১৯৯৭ সালে ভবন ক্রয় করার পর থেকে এই ভবন নিয়ে মামলা। মামলা শেষ হলেও সংগঠনটিতে শুরু হয় নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ। তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, নির্বাচন না দেওয়া এবং সংগঠনের আয়—ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ায় বারবার অচলাবস্থার তৈরি হয়।
গত ২৭ এপ্রিল শনিবারের সভায় তর্কবিতর্কের  এক পর্যায়ে কণ্ঠভোট নেওয়া হয় । কণ্ঠভোটে আগামী ২ জুন পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ এবং ১৫ জুন ২০২৪—এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ভোট প্রদান করেন। কিন্তু মোহাম্মদ তাহের এবং মীর কাদের রাসেল তা সরাসরি বিরোধিতা করেন। তারা সাধারন সভা ডাকবার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এতে সভায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই অনেকে সভাস্থল ত্যাগ করেন।

চট্রগ্রাম সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও অর্ন্তবর্তীকালীন  কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম। তিনি গত ২৭ এপ্রিলের সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন। প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। তবে হাতাহাতি হয় নি। সময়ের অভাবে সভা মুলতবী করা হয়েছে। এ মাসেই আমরা আবার বসবো। অর্ন্তবর্তীকালীন  কমিটির মেয়াদ ১৫ জুন পর্যন্ত রয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। কার্যত নির্বাচন কমিশন গঠন করার পর আমাদের কমিটির কোন কাজ থাকবে না। সেলিম বলেন, সদস্য সংগ্রহের সময়সীমা নিয়ে দ্বিমত ছিল। মীর কাদের রাসেল, নুরুল আনোয়ার ও মুনির আহমেদ আরও ৩ সপ্তাহ বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অন্যরা বলছিলেন, ৫ সপ্তাহ বাড়াতে। তবে আমি সভাপতি হিসেবে সদস্য সংগ্রহ ৪ সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব করলে সবাই মেনে নেন। আগামী ২৬ মে সমিতির সদস্য হবার শেষ দিন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বশেষ ১৫০০ জন সদস্য হয়েছেন। এই ১ মাসে তা অনেক বাড়বে। ‘দেড় বছর আগে অর্ন্তবর্তীকালীন  কমিটি হয়েছে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের জন্য। এতও সময় নেবার কারন কি?’  জবাবে জ্বনাব সেলিম বলেন, আসলে কমিটি হয়েছিল ৯ মাসের জন্য।  এ সময়ে পুরো দায়িত্ব শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই সাধারন সভা করে আরও ৯ মাস বাড়ানো হয়েছে। যার মেয়াদ ১৫ জুন শেষ হবে। আশা করছি, এর মধ্যেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

মাকসুদ এইচ চৌধুরী সমিতির ১৫ সদস্যের অর্ন্তবর্তীকালীন  কমিটির অন্যতম সদস্য। ২৭ এপ্রিলের সভায় তার সাথেই অপর সদস্য আবু তাহেরের বাদানুবাদ ঘটে। এক পর্যায়ে আবু তাহের চেয়ার ছেড়ে মাকসুদ চৌধুরীর দিকে তেড়ে আসেন। জ্বনাব চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন,কন্ঠভোটে মেজোরিটির মতামতকে আমলে না নিয়ে ৩ জন সদস্য সভায় হট্রগোল করেন। তিনি বলেন, গত ৪ মাস কেন বৈঠক হয় নি। নির্বাচনকে পিছিয়ে দেবার চক্রান্ত হচ্ছে। আমরা পুরনো কোন গডফাদারের হস্তক্ষেপ চাই না। তথাকথিত মুরুব্বিরাই সমস্যা। তাদের সন্মান দেখাতে গিয়েই যত সমস্যা হচ্ছে। ‘আপনাদের কমিটির মেয়াদ আছে ১৫ জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব দেয়া সম্ভব? ’ জবাবে মাকসুদ চৌধুরী বলেন, সম্ভব নয়। ভোটার তালিকাই চুড়ান্ত হয় নি। নির্বাচন কমিশনকেও ৬০ দিন সময় দিতে হবে।আমিতো ৪ মাস ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। সাব কমিটিগুলো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হতো না। সভায় হট্রগোল প্রশ্নে তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরায় সব আছে। আমি তা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। এতে চট্রগ্রামবাসী দেখতে পারবেন বৈঠকে কে কারা হট্রগোল করেছে।

অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটির অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আবু তাহের। সভায় উত্তেজনা সৃষ্টি ও একজন সদস্যের দিকে তেড়ে যাওয়া প্রশ্নে তিনি বলেন, ডাহা মিথ্যা কথা। সভা হলেতো একটু বাড়াবাড়ি হয়েই থাকে। কিন্তু অভিযোগ ঠিক নয়। ‘মাকসুদ চৌধুরীতো ভিডিও প্রকাশের দাবি জানাচ্ছেন। আপনি কি বলেন?’ জ্বনাব তাহের বলেন, চাইলে অবশ্যই করা হবে। তিনি আরও বলেন, দেড় বছর আগে হাবিব-বিল্লাহ ও আমাদের গ্রুপের ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে এলাকার কিছু মুরুব্বী সহায়তা করেন। ২ পক্ষের লোকজন নিয়েই এই অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটি হয়েছে। মাকসুদ চৌধুরী আমাদের গ্রুপ থেকেই কমিটিতে এসেছেন। সভায় আমি বলেছিলাম, এ বৈঠকে অনেক বিষয়ে আমরা একমত হতে পারছি না। চলুন সংগঠনের মুরুব্বীদের সাথে আলোচনা করে একটি ফয়সালা বের করি। আর সেখানেও কিছু না হলে আমরা সাধারন সভা করে সিদ্ধান্ত নেব। গত সাধারন সভার সিদ্ধান্ততো আমরা অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটি পরিবর্তন করতে পারি না। তারা আমার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে আমার বিরোধিতা করতে থাকেন। অথচ মাকসুদ আমাদের গ্রুপ থেকেই সদস্য। এখন সে বিরোধীদের সুরে কথা বলছেন। তিনি আরও বলেন, সেতো গত ৩টি সভাতেই আসেন নি। সংবিধান অনুসারে তার কমিটিতে সদস্যপদ থাকবার কথা নয়। আমরা কিন্তু সে কথা বলছি না। আর সেতো রাজনীতি করেন। আমরা দীর্ঘদিন সংগঠন করছি একসাথে। তার মুখে এ ধরনের কথা শোভা পায় না।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাকসুদ এইচ চৌধুরী, মনির আহমেদ,মাহবুবুর রহমান,আহসান হাবিব,মুক্তাদির বিল্লাহ,সুমন উদ্দীন,জয়নাল আবেদীন আতিক,কাশেম, মোহাম্মদ হারুন,নুরুল আনোয়ার,মীর কাদের রাসেল, মোহাম্মদ আবু তাহের ও মোহাম্মদ সেলিম।

 

Facebook Comments Box

Posted ১০:১৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com